রূপগঞ্জ সংবাদদাতা:
রাজধানী ঢাকার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সর্বত্রই করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। উপজেলার হাট-বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ। নেই ক্রেতাদের সমাগম। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তবে বাজারের দোকান গুলোতে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড রাবের সংকট রয়েছে। দামও বেশি।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ৭ শতাধিক প্রবাসী রূপগঞ্জে এসেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৪ জন প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে নিশ্চিত করেছেন। ইতিমধ্যে ৪ জন প্রবাসীর জরিমানা করেছেন প্রশাসন। বাকীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ঘরে বসে সাধারণ মানুষ অলস সময় পার করছেন। কেউ টেলিভিশন দেখে আর কেউবা ঘুমিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। তবে ভয়, শঙ্কা তাদের পিছু ছাড়ছে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে করোনাভাইরাসের খবর জানতে টেলিভিশনের দিকে চোখ রাখছেন। বিশেষ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইইডিসিআর) প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের তথ্য জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
যখন বিশ^জুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক চলছে তখন রূপগঞ্জের প্রতিটি অঞ্চলে আতঙ্কিত হয়ে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই তাঁরা চলছে। সাধারণ মানুষের চলাচল ও জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
রূপগঞ্জের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। লোকজনের চলাচল নেই। রিকশা-অটোরিকশা ছাড়া কোন পরিবহনের চলাচল নেই। দোকান-পাট ও চায়ের দোকানে কোন আড্ডা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মুনাফা লোভী কিছু ব্যবসায়ী। হাট বাজারে আগতদের হাত, মুখ ধোয়ার জন্য স্থানে স্থানে সাবান ও পানি রাখা হয়েছে।
কাঞ্চন, তারাবো, ভুলতা, গাউছিয়া, ইউসুফগঞ্জ, বাঘবের ও মুড়াপাড়া সহ আশপাশের সকল হাট বাজারে আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। মুড়াপাড়া বাজারের জনকল্যাণ ফার্মেসীর মালিক ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মশিউর রমান তারেক বলেন, সাধারণ মানুষ এখন খুব সতর্ক। আইনের প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধাশীল। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ তাঁরা মেনে চলছেন। বাজারে লোক সমাগম কম। বিক্রিও কম।
রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ, রূপগঞ্জ উপজেলা কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ও শিক্ষক কল্যাণ সমিতি, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ সামাজিক সংঘটনগুলো পৃথক পৃথক করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করছেন। কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া এলাকায় জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করেন এবং হ্যান্ড ওয়াশ ও মাস্ক বিনামুল্যে বিতরণ করেন। তারাব পৌর সভার মেয়র হাছিনা গাজীর নির্দেশে জীবাণুনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
পিতলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওবায়দুল মজিদ জুয়েল বলেন, আমরা কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি না। আত্মীয়দেরও বেড়াতে যাওয়া নিরুৎসাহীত করছি। দক্ষিণ নবগ্রামের আল আমিন মাসুদ বলেন, কেউ কেউ রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন গাছের পাতা ও হুজুরের পানি পড়ার উপর নির্ভর করছেন। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জন প্রতিনিধিরাও করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলছেন। হাঁচি বা কাঁশি দেওয়ার সময় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের প্রতিরোধে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে কাজ করে চলছেন। স্বাস্থ্য সেবা লাভের ক্ষেত্রে নারীরাও এগিয়ে রয়েছেন। তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী সার্বক্ষণিক সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। হ্যান্ড ওয়াশ, মাস্ক সহ সকল ধরণের সরঞ্জামাদি বিনামুল্যে বিতরণ করছেন।
ভুলতার মেমোরী হাসপাতালের মালিক ডাঃ ফারুকুল ইসলাম বলেন, গলা ও মুখের ভিতরটা ভেজা রাখতে কিছুক্ষণ পর পর চা অথবা গরম পানীয় পান করা প্রয়োজন। জামা-কাপড়সহ ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখতে হবে। সচেতন হলেই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের উদ্যোগে রূপগঞ্জের ৫শতাধিক মসজিদে একযোগে করোনাভাইরাস থেকে দেশবাসীর মুক্তির কামনায় মোনাজাত করা হয়। জু’মার নামাজের সময় সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল। মুসল্লিরা মাস্ক ও গ্লাভস পরে মসজিদে আসেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছি। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে হবে। দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য স্থিতিশীল রাখতে হাট বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।